** তোমার লেখা চিঠি **







মিন ময়,

চিঠি দিয়ছি বলে Sorry, আর কখনো চিঠি দিয়ে তোমার কাছে বেহায়া হব না।



আসলে কিছু কথা তোমাকে বলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু যতবারই তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি ততবারই কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই এই চিঠির আশ্রয় নিলাম। চেষ্টা করব যাতে চিঠিটা মোটামুটি সংক্ষিপ্ত হয়। যদিও তোমার সাথে আমার পরিচয় খুব বেশী দিনের নয়। তবুও তোমাকে আমি যেটুকু চিনেছি সেটুকু আচরণ সবসময় আমাকে মুগ্ধ করেছে।



প্রথম প্রথম কলেজে এসে খুব অস্তত্বি লাগত। নিজেকে মানাতে পারতাম না। সদ্য কলেজে উঠা একগাদা ছেলে-মেয়ের উছৃঙ্খল আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড় আমার খুব বিরক্ত লাগত। সারাক্ষণ উদগ্রীব হয়ে থাকতাম কখন বাসায় যাব আর ডায়রী বা কম্পিউটারে কিছু লিখব।



দিন কয়েকপরে কি করে যেন দুজন বন্ধু তৈরি হল। দুজনই সমবয়সী। একজন ছিল খুবই চঞ্চল আর ড্রাগ এডিক্ট্যাড। অপরজন ছিল বেশ ফানি এবং সদা হাস্যরত যুবক।

কিন্তু ওদের সাথে আমার তেমন আড্ডা দেওয়া হত না। হয়তো টিফিন ব্রেকে দুটো সমূচা আর দু-চারটা সিগারেট এই পর্যন্তই।



একা থাকতে আমার অন্যরকম ভালো লাগত। নিঃসঙ্গ থেকে শুধু সাহিত্য নিয়ে চিন্তা করতাম। তবে আমি কিন্তু পৃথিবী সম্পর্কে উদাস ছিলাম না।

দশজন মানুষ কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া-মারামারি করলে তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে আমার বেশী সময় লাগত না। এমন কি আমি আমার আব্বুর ব্যবসায়ীক ঝামেলার সমাধানও করেছি কয়েকবার। আমার কোন বন্ধু-বান্ধব আজ পর্যন্ত আমার কথা শোনেনি এমন নজির খুব কমই আছে। আমি ধমক দিলে কম-বেশী সবাই আমার কথা শুনত।



হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। একদিন কলেজে ক্লাস চলছে। এ সময় একটি মেয়ে ঢুকল ক্লাসে। হলুদ বর্ণের সেলোয়ার-কামিজ পড়ে চুলগুলো বেণী করে খুব সংযত ভঙ্গিতে বেঞ্চে বসল। খুবই সাধারণ আর শালীনতাপূর্ণ আচরণের একজনকে দেখলাম আমি। অথচ সেই সাধারণও আর দশটা মেয়ের চেয়ে আলাদা।

এক দঙ্গল ঘাসের মাঝে একটি ফুল যেন দেখলাম আমি। কি যে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি! ভাগ্যিস কেউ দেখেনি, দেখলে লজ্জ্বার অন্ত ছিল না।

পরবর্তী তিনদিন আর সেই মেয়েটিকে দেখতে পেলাম না আমি। এর মধ্যে আমাদের সেকশনও আলাদা করে দিয়েছেন প্রিন্সিপাল। আবার তাকে দেখলাম আমি। একা নয়, একজন বান্ধবী সহ, পরেরদিন দুই বান্ধবী সহ।



মেয়েটার আশেপাশে ঘুরতে লাগলাম আমি গোলক ধাঁধার মত। কিন্তু মেয়েদের সাথে তো আর ইচ্ছে করলেই কথা বলা যায় না। আমার প্রথম দিকের সেই ফানি ও হাস্যরত বন্ধু কিভাবে যে তার সাথে আমাকে আলাপ করিয়ে দিল তা মনে পড়লে এখনো আমার হাসি পায়।

প্রথমবার আলাপ হওয়ার পর আমি লজ্জ্বায় বেশী কথা বলতেই পারিনি। সেদিন রাতে আমার ঘুমুতে অনেক দেরী হল। এ পাশ ও পাশ বিছানায় কাত হয়ে খালি মেয়েটিকেই মনে পড়ে। আশ্চর্যের বিষয় হল আমি এত অস্থির হয়েছিলাম যে সেদিন তার নামও জানতে ভুলে গিয়েছিলাম। এরপর নিয়মিত তার সাথে কলেজে কথা ও দেখা। প্রথমদিকের কথাগুলো ছিল শুধুই সৌজন্যতাকে ঘিরে। এক কাপ চায়ের মাধ্যমে Friendship!



আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম তার মত ভাল মেয়ে খুব কম হয়। কলেজের অন্যান্য মেয়েদের মত সদ্য পাখা গজানো উঁইপোকার চালচলন মোটেও তার মধ্যে নেই।

সে কথা বলত কম, কিন্তু কথার মধ্যে মোটেও ভাণ বা ঢঙ থাকত না। নিখাদ মনের সরল প্রতিফলন দেখতে পেয়েছিলাম তার মায়াময় চোখ জোড়ায়।



আমার মনে হল এরকম একটি মেয়ের সাথে নির্দ্বিধায় সারাটি জীবন পার করা যায়। সেইদিনই আমি ভালোবেসে ফেললাম তাকে। আমার ভয় ছিল আধুনিক বর্বর আর চাল-চুলাহীন আবেগের ভালোবাসা যদি আমাদের জড়িয়ে ধরে তাহলে কি হবে। কিন্তু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার সমস্ত আশঙ্কা দূর হয়ে গেল।



একদিন অনেক সাহস করে, অনেকবার আয়নার সামনে Practice করে, অনেকের সাথে পরামর্শ করে তাকে মনের কথা বলে ফেললাম।

বলতে গিয়ে আমি আরেকটু হলেই উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আমার কথাগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করল। তার সৌম্য আর মায়াবী মুখ দেখে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম- কোনদিনও মেয়েটিকে আমি কোন প্রকার কষ্ট দিব না।



আশ্চর্যের বিষয় হল সে রাজী হল। কথাটি শুনে আমার বিশ্বাস হতে চাইল না। আমি কয়েকবার নিজের গায়ে চিমটি মেরে দেখলাম আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি জেগে আছি।

আমাদের সম্পর্কে শুরু হয়ে গেল। প্রথম প্রথম ও আমাকে খুব Miss করত। সে সময়ে আমি নিজেকে বিসর্জন দিলাম ওর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। আমার যে ব্যক্তিত্ব,স্বত্ত্বা এবং নিজস্ব গুরুত্ব ছিল সব আমি হারিয়ে ফেললাম।

অথচ এই জিনিসগুলো মানুষ দীর্ঘসময় সাধনা করে অর্জন করে। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি যার কাছে এসব উৎসর্গ করেছি সে কখনো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।



সে আমাকে শাষণ করলে আমি খুব উপভোগ করতাম। আমি মনে মনে তাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করতাম। একদিন হঠাৎ করে কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। আমার ভীষণ খারাপ লাগল। কলেজ চলাকালে তাকে অন্তত কয়েকঘন্টা দৈনিক দেখতে পেতাম। এখন কি আর দেখা হবে না?

চোখের আড়াল হলে নাকি মনেরও আড়াল হয়ে যায়। ও আমার মনের আড়াল হল না, তবে আমি ওর মনের আড়াল হয়ে গেলাম। রোজার মাসে প্রতিটি দিন শুধু এককাপ দুধ সেহরী হিসেবে খেয়ে কত দিন যে ইফতারীর সময় খালি পেটে ক্ষিধে নিয়ে মেয়েটার এলাকায় দাঁড়িয়ে থেকেছি তার কোন হিসাব নেই।



শুধু এক পলক চোখের দেখা দেখার জন্য সব কিছু ছেড়ে দেহকে এত কষ্ট দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে এটা স্বল্পদিনের আবেগ। কিন্তু ২১ বছরের একটা ছেলের আবেগ মিশ্রিত ভালবাসা আর ১৭/১৮ বছরের ছেলের আবেগের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে।

এই পার্থক্য সে না ধরে উল্টো আমাকে ধমক দিয়েছে- “বেহায়ার মত বারবার ফোন দাও কেন? আরেকদিন যদি আমাদের এলাকায় আসো তাহলে কিন্তু মেরে তোমার ঠ্যাঙ ভেঙ্গে ফেলব।”

ওর জবাব শুনে আমার নরম হৃদয়টা কষ্টে চুরমার হয়ে যেতে চাইত। কিন্তু আমি হাসিমুখ করে কথা বলে সমস্ত সহ্য করতাম।

সাহিত্য লিখি তো, একটা কথা খুব ভালো করে জানি- ভালবাসার সম্পর্কে দুজনই যদি কাটা কাটা খোঁচা মারা কথা বলে তাহলে সম্পর্ক টিকে না।



এই ধারণা বুকে নিয়ে সব সহ্য করতাম। ভাবতাম, একদিন নিশ্চয়ই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ওকে কতখানি ভালবাসি ও বোধহয় বুঝতে পারেনি এখনো।

কিন্তু সেই একদিন যে আমার জীবনে অন্যভাবে আসবে তা আমি ঘুর্ণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারিনি। একদিন দেখা করার কথা বলে সমস্ত দেনা-পাওনার সম্পর্ক ও চুকিয়ে ফেলল।

কি ভুল করেছি? অনেকবার জিজ্ঞ্যেস করেও তার কোন জবাব পাইনি। এ সম্পর্ক ভাঙার জন্য ওর সাথে গড়িনি। ও নিজেই একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিল- “তুমি কি Time Pass করার জন্য আমাকে ভালোবেসেছ?”

আসলে ওকে আমি যেরকম জানি সেই তামান্নার সাথে পরের তামান্নাকে মেলাতে পারছিলাম না।



আমার ভালোবাসার মাঝে কোন খুঁত ছিল না কিংবা স্বার্থ ছিল না এ কথা হয়তো জোর দিয়ে বলতে পারব না। তবে অন্তরের গভীর থেকে যতখানি আবেগ ও ভালোবাসা মানুষের আসে, সবটুকু আমি তোমার জন্য রেখেছিলাম। অথচ আজকাল নাকি এতখানি আবেগ দিয়ে ভালোবাসা উচিত নয়। আমি শুধু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিয়েছি।

তবুও তুমি যা করেছ নিজের বুদ্ধিতে করেছ। জোর করে আমি ভালো-খারাপ হতে পারি, কিন্তু তোমার ভালোবাসা তো আর পাব না।

এক রাতে দূর আকাশে Failing Star দেখেছিলাম। তখন মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম- তুমি যেখানেই থাকো, সারাজীবন যেন সুখে থাকো।

মনে হচ্ছে আমাকে কষ্ট দিলেই সুখে থাকবে তুমি। সত্যি বলছি তামান্না, তোমার ভালো কামনা করে এসেছি সর্বদা, এখনো তাই করছি।



“কেউ যখন কাউকে Avoid করে, তখন বুঝতে হবে নিশ্চয়ই তার জীবনে অন্য কেউ এসেছে।”

এই কথাটা পৃথিবীর সমস্ত ছেলে-মেয়ের বেলায় সত্য হলেও তোমার বেলায় মিথ্যা। আমি জানি আমার বিশ্বাস সত্য ও নির্ভুল।



অনেক বড় করে ফেললাম চিঠিটা। Extremely Sorry for that, ভালো থেকো, সুস্থ থেকো।

আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি। এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তোমাকে নিয়ে লিখতে বসি, এখনো তোমাকে সাথে করে নিয়ে এই অন্ধকার পৃথিবী পাড়ি দিতে চাই।



যদি কোনদিন তোমার মনে হয় এই অভদ্র,ফাজিল আর বেহায়া ছেলেটাকে সারাজীবনের জন্য আঁচলে বেঁধে রাখবে, তাহলে চলে এসো আমার কাছে। বিশ্বাস কর, আমি এখনো আগের মতই গভীর ভালোবাসা নিয়ে তোমার গমন পথে হাত বাড়িয়ে বসে আছি। পারলে আমাকে নিয়ে যেও।



-জোবায়ের
Share on Google Plus

About Zobayer Ahmmed

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment

0 comments:

Post a Comment