*** প্রিয় বন্ধুর কাছে খোলা চিঠি ***
-প্রিয় বন্ধু সালমা,,,,,
জানি ভালই আছ, সর্বদা ভাল থাকবে আশাকরি, আর আমি? ভাল……! বলতো আজ কতদিন আমাদের দেখা হয় না? জানি পারবেনা, পাঁচ বছর। খুব বেশী না অন্তত তোমার কাছে তো নয়ই কারণ? না হয় নাই জানলে।
বন্ধু তোমার মনে আছে দু’টাকার ঝালমুড়ি কিনে দু’জনে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা? জান.. আজ ফাস্ট ফুডের কালচারেও আমি সেই ঝালমুড়ির স্বাদ খুজি কিন্তু পাইনা তুমি কি পাও? আচ্ছা এখন তো বর্ষাকাল, আচ্ছা তোমার মনে আছে তুমি আমার কাছে একগাছি কদম চেয়েছিলে আমি গাছে উঠতে পারিনা তাই সেদিন তোমাকে বৃষ্টিভেজা কদম ফুল দিতে পারিনি। তাই তুমি আমার সাথে আড়ি দিয়েছিলে
তুমি বড় অভিমানি ছিলে…………….
তুমি জানলে অবাক হবে আমাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় এখন একটি কদম গাছ আছে তাতে কদম ফুল ধরেছে তুমি নেই তাই আজ কদম ফুল দেখে আমার কোন উচ্ছাস নেই। শুধু মনে হয়, নে হয় তুমি নেই তাই কদমগুলি তার আবেদনতা হারিয়েছে। সময় করে এসো আমার বাড়ী, আমার গাছের সব কদম আমি তোমায় দেব, নেবে তুমি?…………….
আচ্ছা বন্ধু মনে আছে তোমার? আমার প্রথম স্কুল ফাকি দেবার সেই দিনটির কথা?, শুনেছি সেদিন তোমার নিষেধ সত্ত্বেও স্কুল ফাঁকি দেওয়ায় তুমি খুব কেদেঁছিলে, কেন? তা আজও আমার কাছে রহস্যই রয়েগেছে। তুমি সত্যিই যদি সেদিন কেঁদে থাকো তাহলে আজ কেন আমি মাঝ পথে লেখাপড়ার ছেড়ে দিয়েছি জেনেও কাঁদনি, নাকি কেঁদেছ? তুমি জানো? আমি আজও বৃষ্টি হলেই ভিজি কারণ? তুমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করতে, বৃষ্টি হলেই বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুয়ে দেখতে আর বলতে “হে বৃষ্টি তুমি আমার মনের সব দুঃখ ধুয়ে নিয়ে যাও, এখনও কি তেমনই বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখ? আমি আজও বৃষ্টিতে ভিজি, তোমার ছোয়া পাবার আশায়।
তুমি খুব বৃষ্টি বিলাসী ছিলে…………………….
আচ্ছা তোমার মনে আছে সেই ছেলেটির কথা? যে কিনা তোমায় ভালবাসত পাগলের মত… ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল তাই তুমি আমার সাথে কথা বলনি অনেকদিন। হয়ত সেই অভিমান আজও তোমার কাটেনি। অথচ আমিও না তোমাকে রাগানোর জন্য ওর সাথে আরো বেশী করে মিশতাম, তুমি রাগলে চৈত্রের ভর দুপুরেও শিশির ভির করত তোমার নাকের ডগায়………….. আর আমি তা মুছে দেবার জন্য কতইনা চেষ্টা করতাম কিন্তু তোমাকে ছোবার সাহস হতনা। তুমি কি তা বুঝতে?
তোমার মনে আছে সেই চিঠির কথা, যেখানে প্রাপক ছিলে তুমি আর প্রেরক আমি, সত্যি বন্ধৃ বিশ্বাস করো সেই চিঠি আমি তোমাকে লিখিনি লিখেছ অন্য কেউ কিন্তু তার দায় ভার নিতে হয়েছে আমাকে। যা আমাকে আজও কাদঁতে সাহায্য করে। মনে পড়ে? আমাকে কাদঁতে দেখে তুমি বলেছিলে “চোখে জল খুব মূল্যবান জিনিস এটা অযথা ফেলতে নেই, তাহলে সময় মত এই জল পাবেনা” তোমার কথাই আজ সত্য আমার চোখে আর জল আসেনা, শুধু বুকটা ভারী ভারী লাগে। আজ মন খারাপ থাকলে কেউ পাশে বসে দুষ্টুমির ছলে মন ভালো করার চেষ্টা করে না।
তুমি খুব……………
আজ তোমাকে খুব মনে পড়ছে, তোমার?
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে তুমি আমাকে একটি কার্ড উপহার দিয়ে ছিলে কিন্তু আমি সেটা গ্রহন করিনি। কেন? সেটা না হয় নাইই জানলে। আমার উপর অভিমান করে সেই কার্ডটি তুমি ছিঁড়ে ৭৬ টুকরো করেছিলে আর চোখের জলে চোখ ভাসিয়ে চলে গেলে আর ফিরে আসনি। তুমি শুনে হয়ত অবাক হবে তোমার ছিঁড়ে ফেলা সেই কার্ডের টুকরো গুলো আজও আমি যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছি আমার কাছে। তুমি সেদিন চলে যাবার পর সেগুলো আমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম। এখনও তোমার কথা মনে হলে সেগুলোর ওপর হাত বুলাই, অনুভব করি তোমার স্পর্শ। তোমার সেই স্মৃতি আমি আজও রেখেছি যত্ন করে। তুমি চাইলে তা নিয়ে যেতে পার, নেবে?
শুনেছি সেদিন বাসায় গিয়ে তুমি কেঁদেছিলে, ঘরের দরজা বন্ধ করে গ্লাস ভেঙ্গে নিজের হাত রক্তাক্ত করেছিলে। কেন, সেই প্রশ্ন আজ করব না, শুধু বলতে চাই তুমি কেদেঁছ এক দিন, আর আমি………।
যখন সে কথা ভাবি নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হয়, তুমি বিশ্বাস করো আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি, যা হয়েছে তা শুধুই তোমার বোঝার ভুল অথবা তোমাকে বোঝাতে আমার ব্যর্থতা। তাই সেই ব্যর্থতার দায়ভার আমি আজও বহন করছি। সে দিনের পর থেকে তুমি আর আমাকে সহ্যই করতে পারনা। আমি কি খুব বড় অপরাধ করে ফেলেছি? নাকি অন্য কোন কারণ? পারলে আমাকে জানাবে। সুখে থাকো, সবসময় সবার আদর ভালবাসার মধ্যে থাকো।
তোমার সুন্দর ও সুখী জীবনের প্রত্যাশায়
আমি………………….
0 comments:
Post a Comment