অনেক দিন হয়ে গেছে তুমি কাছে নেই। আচ্ছা সেদিন ভূলটা কার ছিল, তোমার নাকি আমার? ভূলটা বোধহয় আমারই ছিল। তা না হলে তো সেদিন আমায় এভাবে ছেড়ে যেতেনা! আসলে আমার জম্মটাই বৃথা। পোড়া কপাল নিয়ে জম্মেছি তো, তাই! জম্মের সময় মাকে হারিয়েছি আর শৈশবে ৫ বছর বয়সে বাবাকে। দুঃখ-কষ্ট যার সুখের নীড়, তার আবার কিসের দুঃখ? জীবনের ১২টা বছর যার আচলে বড় হয়েছি, সেই পালিতা মায়ের কথাও আজ খুব মনে পড়ছে। স্মৃতিরা আজ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্যও কখনো যে আমায় বুঝতে দেয়নি বাবা-মা স্বজন হারানো ব্যথা। সেই মা, তুমি আজ কোথায় হারালে? এখনও মনেহয়, ঘুমের ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর অশ্রুভেজা চোখে বলছে, খোকা তুই কবে বড় হবি, কবে নিজেকে বুঝতে শিখবি? জানো মা, এখনও আমি আগের মতোই রয়ে গেছি। সবাইকে নিয়ে কতো ভাবি কিন্তু কেউ আমায় নিয়ে ভাবেনা। যাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছি সেই নির্মলাও না। মা খুব মিস করছি তোমায়। আচ্ছা নির্মলা, তুমিই তো সেদিন বলেছিলে, আমি তোমাকে ছেড়ে গেলেও তুমি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেনা। অথচ, তুমি আজ আমায় মনেও রাখতে চাওনা। একাকিত্ব আজ আমায় ভীষণ তাড়া করছে। শুধু একটাই দোষ ছিল আমার –
– দূর! ছাড়ো তো, ভালো লাগেনা !!
– ইদানিং আমি দেখছি, আমার কোন কিছুই তোমার কাছে ভালো লাগেনা (অশ্রুভেজা চোখে)।
– তোমার ভালো লাগেনা তো আমি করব?
– থাক! তোমার কিছুই করা লাগবেনা। তুমি কি চাওনা আমি তোমার জীবনে থাকি? বাবা ঠিকই বলতেন, ছোট লোকেরা মান চিনেনা।
– এসব তুমি কি বলছ (হতবাক হয়ে) ?
– হ্যা, আমি ঠিকই বলছি। ভুলটা আমার সেদিনই হয়েছে যেদিন না বুঝে, না চিনে তোর মতো একটা লোকের সাথে সম্পর্ক করি।
– বাহ! নির্মলা, বাহ! এটাই তোমার সেই প্রতিশ্রুতি?
– চুপ, চুপ, চুপ কর! আর বলবিনা। আমি এখনই আমার বাবা-মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি। আমায় কতো বলেছে, তোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু একবারের জন্যও ভাবিনি তাদের কথা। যদি ভাবতামই, তাহলে আজ আমায় চোখের জলে ভাসতে হতোনা। (বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার সময়) মনে রাখিস, আমার বুকে তোর আর কখনও ঠাঁই হবেনা। আজ থেকে আমার তোর আর আমার পৃথিবী আলাদা, সম্পূর্ণ আলাদা। আর একটি কথা, তোকে যাতে কখনো আমার পৃথিবীতে না দেখি।।
এই বলেই সেদিন তুমি চলে গেলে। কিন্তু একবারের জন্যও জানতে চাইলেনা…!
নির্মলা কোথায় আছো তুমি? কতটুকু ভালো আছো? খুব জানতে ইচ্ছে করছে। অনেক দিন হলো জানা হয়নি। আমারও বা কি করার আছে? কতবার তোমায় শত উপায়ে খুঁজে বেরিয়েছি। অনবরত চেষ্টায় থেকেও আজ আমি ব্যর্থ! মনে আছে তোমার, যেদিন কলেজে প্রথম দেখা? আর সেখান থেকেই তুমি আমার মনের ঘরে বাসা বেঁধে নিলে। কাঠ ঠোঁকরার মতো আজ মনের ভেতর আঘাত হানছে একাকিত্ব। থাক! বাদ দাও এসব কথা। কোন একটা উপকারের রেষ ধরেই তোমার সাথে সর্বপ্রথম ভাবের আদান- প্রদান। তা কেবল চোখে চোখেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেদিন তোমাকে বিরক্ত করা ঐ হাসিব নামের ছেলেটার কথা মনে আছে তোমার? খুব মেরেছিলাম যাকে। শেষ পর্যন্ত সে তোমাকে আর বিরক্ত করবেনা বলে তোমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চাইল। অথচ, সেইদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা। তুমি করোনি তো কি হয়েছে! তোমার বান্ধবিরা ঠিকই প্রশংসা করেছিল আমার। আর আমার ফোন নাম্বারটি চাওয়া মাত্রই আপন মনে দিয়ে দিলাম। মাঝে মধ্যে কথাও বলতো ওরা আমার সাথে। এ নিয়ে তোমার খুব হিংসে হতো। ওদের সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়াও হতো তোমার। পরে একদিন হঠাৎ করে ফোনে তুমি আমায় বললে, কেমন আছো অরুণ? আমি বললাম কে? তোমার নাম কি? যখন বললে, আমি নির্মলা। সাথে সাথে কেন জানি, বাকশুন্য হয়ে গেলাম। তারপর থেকে নিয়মিত কথা হতে থাকে তোমার সাথে। আসলে ফোনে কথা বলে সময় পার করা মূহুর্তগুলোই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মূহুর্ত। তুমি না বলতে, যখন তোমার মন খারাপ থাকত। তখন ঐ নীল আকাশে দিকে নিরব চোখে তাকিয়ে থাকতে। আর তাকিয়ে থাকায় মনটাও ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যেতো। বিশ্বাস করো, আজ আমিও ঠিক তোমার মতো হয়ে গেছি। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি ঐ নীল আকাশে। তাতেও যদি মন ভালো না হয়। তোমার ভালো লাগা “এফ এ সুমন” -এর পরবাসী গানটি শুনি। কারো সাথে দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করবো এমন বন্ধু- বান্ধবও নেই এখন। কারণ, বন্ধু থাকলে তো ওদের সময় দিতে হয়। সারাদিন তো তোমায় নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। তবে মনের ভেতর সব সময় একটাই ভয় কাজ করত, যদি কখনও হারিয়ে যাও। কিন্তু আমি একবারের জন্যও ভাবতে পারিনি, তুমি আমার জীবন থেকে এভাবে হারিয়ে যাবে। সকাল হলেই ছুঁটে যাই তোমার সেই বান্ধবীদের কাছে। যারা কোন এক সময় আমার সাথে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ত। আজ তাদের শত অনুরোধ করেও তোমার খোঁজ পাওয়া যায় না। তারাও খুব স্বার্থপর হয়ে গেছে তোমার মতো। শত আকুতিতেও তোমার ঠিকানা বলতে রাজি নন তারা। সারাদিন তোমায় খোঁজার পর যখন সন্ধ্যা নামে, তখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আমার দু’চোখে ঘুম নেই কিংবা নেই কোন নাওয়া-খাওয়া। নেট অন করেই ফেসবুক, ব্লগ, বিভিন্ন ওয়েব পেজ থেকে শুরু করে অনেক পত্র-পত্রিকায় তোমাকে নিয়ে কতো লিখি! তোমার বুঝি একবারও চোখে পড়েনা? আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ নাকি ইচ্ছে করেই পড়োনা? তবুও আমি বিশ্বাস করি, একদিন না একদিন তোমায় ঠিক খুঁজে পাবো। তখন আমার সব পরিশ্রম স্বার্থক হবে। আর তা না হলে আমি নিজেই হারিয়ে যাবো দূর অজানায় না ফেরার দেশে। তবে পৃথিবী সাক্ষী থাকবে, কতটুকু ভালোবাসি তোমায়। যেখানেই থাকোনা কেন, সব সময় আমার ভালোবাসা তোমার সাথেই থাকবে।
আজও খুঁজি তোমায়…