%%% অরন্যের দিনরাত্রি %%%
একটা আকাশ তাকে আলো করে রাখে।
সে উন্মনা হয়েছিলো জেনে
অজস্র তারারা তাকে চিঠি লিখেছিলো।
বলেছিলো অপেক্ষার অমল আলোতে
কত কিছুই তো হতে পারে।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করো।
তারাদের হিসাব নিকাশ কে জানে
কে জানে ওদের ক্যালেন্ডারের ভাষা!
কিছুক্ষন মানে সেখানে অনন্তকাল।
অনন্তকাল তাকে থেকে যেতে হবে
এই বিবর্ণ শুনশান নীরবতার কাছে।
ম্রিয়মান এক ভীতু সৈনিকের মত?
কে জানতো যার সাহসীপনা দেখে
একদিন অনেকেই বলেছিলো এই ছেলে রাজা হবে।
রাজ্যপাট চালাবে।
রাজা হবার জন্য রাজার বংশ হতে হয়।
তাহলে?
মা বলতেন দেখিস একদিন
এক রাজকন্যা আসবে।
দুধে আলতা গায়ের রং।
ছেলেবেলা থেকে এই গল্প শুনতে শুনতে ও ভাবতো
একদিন এক রাজকন্যা ঠিকই আসবে পথ ভুলে।
মার বলা গল্পটা সত্যি হয়েছিলো।
একদিন আকাশ আলো করা
রংধনু সাত রং এ সেজে
ও এসেছিলো।
ওর স্বপ্নের রাজকন্যা।
দরজায় খুলে দাঁড়াতেই বলেছিলো
এটা কি ৩১/বি অরণ্যের দিনরাত্রি?
ও মাথা নেড়ে পাশের দরজা দেখিয়ে দিলো।
মনে মনে মেয়েটার নাম দিলো ও তুষার কন্যা।
মানুষের গায়ের রং এত সুন্দর হতে পারে
ওর জানা ছিলো না।
মানুষের চোখ এত মায়াময় হতে পারে
ও দেখেনি কখনো।
মায়াবতী মেয়েটাকে এরপর বহুদিন দেখেছে
ওর ঘরের জানালার পাশ দিয়ে আসা যাওয়ার পথে।
চোখে চোখ পড়লেই একটু হাসি।
ওর মনে হতো আকাশ থেকে তারারা হাসছে।
শুধু ওকে দেখলেই ওর সারাটা দিন আলো হয়ে
যেতো।
কাল সেই মায়াবতী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে
কথাহীন ।
ওকে একটা নীল খাম
দিলো।
খামটা হাতে নিয়ে বসে থাকে ও।
পুরো পৃথিবীর বেদনার নীল খামটা
মুঠোয় ভরে ।
ও হারিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
দুরে বহুদুরে পালাতে হবে।
কোন সে আকাশ তাকে ছাঁয়া দেবে?
মাঝ রাত পেড়িয়ে যায়।
স্হবির ও বসে থাকে।
আকাশ আলো হতে শুরু করে।
বন্ধ খামটা খুলবার সাহস হয়নি ওর।
তবু ভোর বেলা বরাবর
ওকে খুব সাহসী করে।
খামটা খুলে ফেলে ও।
একটা সুন্দর কার্ড।
তাতে লেখা..
"তোমার সাথে দেখা হবার পর অনেকগুলো দিন
চলে গেলো।ভেবেছিলাম একদিন হাত ধরার সাধটুকু
জানাবে।
ভুল দরজায় কড়া নেড়ে একদিন যাকে খুব ভালো
লেগেছিলো
সেই তুমি ।
যার দিকে তাকালেই বুকের গহীনের
সবুজ ঘাস এর বুকে খরগোসরা খেলা করে।
যার হাসি দেখেলে মনে হয় তারারা হাসছে।
সেই তুমি যদি হাত ধরার সাধটুকু চাও
এসো।
কাল বিকাল চারটায়
দেয়া ঠিকানায়।
আর নইলে তুষার এর অনামিকায়
আংটি পড়াবে অন্য কেউ।"
কি ভীষন একটা ভুলের মুখোমুখি
হতে যাচ্ছিল ও।
এমন ও হয়?
ভাবনার সেই মেয়েটি যাকে নাম দিয়েছিলো তুষার।
সে সত্যিই তুষার!
কত পথ ঘাট ঘুরে চারটা বাজবার
কিছুক্ষন আগে
দেয়া ঠিকানায়
পৌছায় যখন ও।
কি আশ্চর্য্য আকাশ ছাপিয়ে
বৃষ্টি নেমে আসে।
দরজায় দাঁড়িয়ে মায়াবতী মেয়েটা
ওর হাতটা ধরে।
ওকে আসতে বলে।
নিমেষেই অপেক্ষার ঘরে
নেমে আসে হাজার তারার আলো।
শুরু হয় অরণ্যের দিনরাত্রির
অরণ্য আর একজন তুষার এর
অন্যরকম পথচলা।।।।

0 comments:
Post a Comment