আমাই মনে পড়ে তোমার




অনেকখানি নীরবতা শেষে 
-কেমন আছো ? 
--(দীর্ঘশ্বাস চেপে)খারাপ না ।তুমি ? 
-জানিনা । 
--(একটা হাসির শব্দ ) এখনো সেই জানিনাতেই আছো ? 
-আচ্ছা আজ কত বছর হলো ? 
--দশ বছর এগারো দিন । ঘন্টা মিনিট বলব ? দাড়াও ক্যালকুলেটরটা আনি । 
-থাক ।বলতে হবেনা ।ভেবেছিলাম সিম বদলেছো । 
--কথা দিয়েছিলাম ।আমি কথা দিয়ে কথা রাখি । 
-খোঁচা দিলে ? 
--ধরে নাও তাই । 
-আচ্ছা ,আমার চেহারা মনে আছে তোমার ? আমি কিন্তু এখনো চোখ বন্ধ করলেই তোমাকে দেখতে পাই । 
--স্কেচ করতে বসেছিলাম একদিন ।দেখি চোখ দুটো আর ঠোঁটের আদল ছাড়া কিছুই মনে নেই !হাহা ! 
-তুমি দেখি আগের মতই চঞ্চল আছো ! 
--তাই মনে হচ্ছে তোমার ??আমার চাঞ্চল্য তুমি খুন করে গেছো শুভ! 
-ওহ ! আজো ক্ষমা করোনি ! 
--কন্ঠে ঘৃণাটুকু টের পাচ্ছোনা ? 
খানিক নীরবতা । 
- তোমাকে মিস করেছি গত দশবছরে । 
--আমি করিনি ! 
-সত্যিই না ? 
--যে ঘৃণার বিষ শিরায় শিরায় 
ঢুকিয়ে দিয়ে গেছো মিস করি কিভাবে বলো ! 
-ক্ষমা করো ! 
--ফোন রাখি । 
-আরেকটু ! প্লিজ ! 
-আমি সেদিনের সেই ২0 বছরের 
কনা নই শুভ ! 
বাকরুদ্ধ করা কান্নাটা দাঁতে দাঁত চেপে সামলে নেয় কনা । সে একটুও দুর্বল হতে চায়না । একটুওনা । 
ওপ্রান্ত থেকে বিষন্ন কন্ঠ 
ভেসে আসে ... 
-আমার বাচ্চাটার একটা মা দরকার ! 
--ওহো ! এই তাহলে ব্যাপার ! হাহ হাহ হাহ হা ! 
কনা পাগলের মত হাসে ।হাসতেই থাকে । 
একটা কাতর কন্ঠ ভেসে এলো 
-ফিরিয়ে দিওনা প্লিজ ! 
--তুমি একটা ছোটলোকের বাচ্চা ছোটলোক ! 
-কণা !! 
--কি গালি শুনে চমকে উঠলে ? 
সেই বিকেলে আমিও চমকে উঠেছি ।আমার কান্না কেউ শুনেনি ! অসংখ্যবার নিজেকে খুন করতে চেয়েছি আমি ! 
পারিনি !পারিনি !পারিনি ! 
-আমি ভুল করেছি ! 
আমি বুঝতে পারিনি ! 
--চুপ একদম চুপ !আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ 
ছিলনা সেদিন আমি ছাড়া । আমি আমার মা হয়ে গিয়েছিলাম ! নিজেকে শাসন 
করেছি ,কষ্ট দিয়েছি ,আঘাত করেছি ! 
তবু শেষ হতে দিইনি ! খবর 
নিয়েছো কখনো তুমি! 
-শেষবারের মত সুযোগ দাও । 
আমি তোমার কান্না ভুলিয়ে দেব ! 
--সুযোগ ! থুহ ! 
-ওহ !এত ঘৃণা ! 
-- পরিমান জানলে তোমার 
মরে যেতে ইচ্ছে হবে । 
-প্লিইজ কণা !আমি জানি তুমি আজো আমাকে ভালোবাস 
--ভালোবাসা !আমি ! কক্ষনো না ! 
-তুমি এখনো আনম্যারেড আমি জানি ! 
--ভুল জানো ! 
-মিথ্যে বোলোনা ।আমি জানি। 
আমি তোমাকে আমাকে আরেকবার সুযোগ দিতে চাই । 
--সুযোগ ! এটা শুনেই মুখে থু থু 
জমা হয়েছে ! রাখো একটু ফেলে আসি । থুহ ! 
- আমার বুকে প্রচন্ড কষ্ট 
জমা হচ্ছে । 
-- কষ্ট বেঁচো । ক্রেতার অভাব হবেনা । 
- আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া ।ভালো ছিলাম না কখনো । 
--ও ! তাই ? 
কণার কন্ঠে ব্যঙ্গ ঝরে পড়ে।
-তুমি বুঝবেনা ।বুঝলে এভাবে আঘাত করে ফিরিয়ে দিতে না ! 
--অনেক বুঝেছি ! আর বুঝতে চাইনা । 
-'ভালো থেকো প্লিজ ।' 
ওপ্রান্ত থেকে কান্নাজড়িত 
কন্ঠে বলে ওঠে শুভ । 
--আমি ভালোই থাকি । 
কণা শান্ত কন্ঠে বলে । 
-(একটা দীর্ঘশ্বাস শেষে)বেশ 
রাখি তবে । ভালো থেকো কণা । 
বহুদিন আগেকার পরিচিত সেই ফোন রাখার শব্দ । 
পুরনো ডায়েরিটা খুলে কিছু একটা লেখার চেষ্টা অনেক্ষন ধরে । 
কণার চোখে অশ্রু জমেছে ।নাক 
গড়িয়ে ঠোঁট ছুয়ে ছুঁয়ে ডায়েরির মলিন পাতায় বিন্দু বিন্দু কষ্ট 
জমা হচ্ছে বহুদিন পর । 
অশ্রু মুছে দেওয়া একটি হাতের বড় বেশি অভাব অনুভব করছে সে হঠাত্ !
Share on Google Plus

About Zobayer Ahmmed

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment

0 comments:

Post a Comment